ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ: পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়া ও চীনের লাভ কোথায়?
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ: পশ্চিমা বিশ্ব, রাশিয়া ও চীনের লাভ কোথায়?
📌 ভূমিকা
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান উত্তেজনা শুধু দুটি দেশের দ্বন্দ্ব নয়—এই সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বিশ্বশক্তিগুলোর এক ধরনের “ছায়া লাভের খেলা” চলছে। যুদ্ধের মঞ্চে রক্ত ঝরে, কিন্তু মঞ্চের বাইরে কিছু রাষ্ট্র ও গোষ্ঠী কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সুবিধা তোলে। বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স) এবং রাশিয়া ও চীন—এই সংঘাতকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছে।
চলুন বিশ্লেষণ করি, কীভাবে এই শক্তিগুলো লাভবান হচ্ছে।
পশ্চিমা বিশ্বের লাভ
১. 💣 অস্ত্র শিল্পের রমরমা ব্যবসা
ইসরাইল ও আরব দেশগুলো যুদ্ধের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের কাছ থেকে উন্নত প্রযুক্তির অস্ত্র ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনে। এতে লাভবান হয়:
-
Lockheed Martin, Raytheon, BAE Systems, Dassault Aviation প্রভৃতি কোম্পানি।
-
ইসরাইলের “Iron Dome” সিস্টেমের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের টেকনোলজি এবং অর্থায়নও রয়েছে।
২. 🛢️ তেলের দামে উত্থান
যুদ্ধের কারণে তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিলে:
-
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।
-
ExxonMobil, Chevron, BP এর মতো পশ্চিমা তেল কোম্পানি বিপুল লাভ তোলে।
-
ইউরোপ ও এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) রপ্তানির সুযোগ বাড়ে।
৩. 🗺️ কূটনৈতিক আধিপত্য বৃদ্ধি
-
ইরানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও চাপ প্রয়োগ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা নিজেদের অবস্থানকে দৃঢ় করে।
-
যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পশ্চিমা দেশগুলো নিজেদের “শান্তির পক্ষ” হিসেবে তুলে ধরে কূটনৈতিকভাবে লাভবান হয়।
রাশিয়ার কৌশলগত সুবিধা
১. 🛰️ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীরতর
-
রাশিয়া ইরানকে ড্রোন প্রযুক্তি ও সামরিক সহযোগিতা দেয়।
-
ইরান-রাশিয়া একসাথে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে “বিকল্প অর্থনৈতিক জোট” গড়ে তোলে।
২. 🔁 যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ বিভ্রান্ত করা
-
যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরান-ইসরাইল দ্বন্দ্বে ব্যস্ত, তখন রাশিয়া ইউক্রেনে নিজেদের কৌশল বাস্তবায়নে সুবিধা পায়।
৩. 💰 জ্বালানি বাজারে আধিপত্য
-
যুদ্ধকালীন সময় ইউরোপে জ্বালানি ঘাটতির সুযোগ নিয়ে রাশিয়া তেল-গ্যাস বিক্রি করে চীন, ভারতসহ অন্য ক্রেতাদের কাছে।
চীনের কৌশলগত লাভ
১. 🛢️ তেলের নিরাপদ সরবরাহ
-
ইরানের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় চীন সস্তায় তেল ও গ্যাস কিনে।
-
দীর্ঘমেয়াদি বাণিজ্য চুক্তি করে ইরানের সঙ্গে, যেমন ২৫ বছরের অর্থনৈতিক চুক্তি।
২. 🌐 পশ্চিমা শক্তিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরানো
-
যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ মধ্যপ্রাচ্যে সরলে, চীন নিজের অঞ্চল (বিশেষ করে তাইওয়ান ও দক্ষিণ চীন সাগর) নিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।
৩. 📈 নিজের প্রভাব বিস্তার
-
চীন নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে তুলে ধরে—“সঙ্কট নিরসনে মধ্যস্থতাকারী” হিসেবে আবির্ভূত হয়।
-
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর মাধ্যমে সম্পর্ক শক্তিশালী করে।
📊 তুলনামূলক চিত্র: কে কীভাবে লাভবান?
| শক্তি | লাভের ধরন |
|---|---|
| 🇺🇸 যুক্তরাষ্ট্র | অস্ত্র বিক্রি, তেল-গ্যাস রপ্তানি, কূটনৈতিক প্রভাব |
| 🇬🇧 যুক্তরাজ্য | প্রতিরক্ষা শিল্প ও মিত্রদের উপর নিয়ন্ত্রণ |
| 🇫🇷 ফ্রান্স | অস্ত্র চুক্তি, আন্তর্জাতিক অবস্থান জোরদার |
| 🇷🇺 রাশিয়া | ইরানের মিত্রতা, পশ্চিমা মনোযোগ সরানো, তেল রপ্তানি |
| 🇨🇳 চীন | সস্তায় জ্বালানি, কৌশলগত কূটনীতি, বাণিজ্য বিস্তার |
🧠 উপসংহার
ইরান ও ইসরাইলের যুদ্ধ একদিকে মানবিক সংকট, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কৌশলের এক বিশাল খেলা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন—এই পাঁচ শক্তি নিজ নিজ উপায়ে এই সংঘর্ষকে ব্যবহার করছে নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্য। যুদ্ধের দাম আমরা দেখি রক্তে, কিন্তু এর মুনাফা জমে বিশ্বরাজনীতির অন্দরে।

Carry on
ভালো লিখেছেন